যারা দেশের নিরাপত্তা দেবে তারা নিজেরাই যদি নিরাপদ না হয় তাহলে নিরাপত্তা নিয়ে কী আশা করা যাবে–এমন প্রশ্ন তুলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এনইসি সম্মেলন কক্ষে গতকাল জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় পুলিশের একটি প্রকল্প অনুমোদনের সময় দেশের থানাগুলোর অবস্থা বর্ণনা করতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ কথা বলেছেন। বরাবরের মতো এদিনও একনেক সভায় সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী। এছাড়া বন্যার শঙ্কা প্রকাশ করে এজন্য মন্ত্রী–সচিবদের প্রস্তুত থাকতে বলেছেন তিনি।
১০৭টি থানার আধুনিকায়নে গ্রহণ করা প্রকল্পটি হচ্ছে ‘দেশের বিভিন্ন স্থানে বাংলাদেশ পুলিশের থানার প্রশাসনিক কাম ব্যারাক ভবন নির্মাণ’। এই প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ৬২৪ কোটি ৫ লাখ টাকা। প্রকল্প বাস্তবায়নের মেয়াদকাল এ বছরের মে থেকে ২০২৭ সালের জুন। খবর বিডিনিউজের।
বৈঠক পরবর্তী ব্রিফিংয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী আব্দুস সালাম বলেন, তিনি (প্রধানমন্ত্রী) বলেছেন, যারা দেশের নিরাপত্তা দেবে তারা নিজেরাই যদি নিরাপদ না হয় তাহলে কী নিরাপত্তা আশা করা যাবে। তাই যত থানা আছে সারা দেশে, সবগুলোর একসাথে উন্নয়ন করতে হবে।
তিনি বলেন, দেশের বিভিন্ন থানা ভবন এখনও পুরনো। বৃষ্টি হলে ছাদ থেকে পানি পড়ে। অস্ত্রাগারও সবসময় নিরাপদ নয়। প্রধানমন্ত্রীর এটি একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। আমরা সেভাবেই প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করব।
প্রকল্পের বিষয়ে পরিকল্পনা সচিব সত্যজিত কর্মকার বলেন, দেশে এখন ৬৩৯টি থানা রয়েছে। এর আগেই ১৭৭টি থানার উন্নয়ন করা হয়েছে। এখন আরও ১০৭টি থানার নতুন ভবন ও আধুনিকায়নের জন্য এ প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এর পুরো অর্থের যোগান দেবে সরকার। প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্ত হচ্ছে, বাকি থানাগুলো যেন ফেলে রাখা না হয়। বাকিগুলোর জন্যও অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্রকল্প নেয়া হয়।
প্রকল্প পরিচালকদের প্রশিক্ষণে জোর : পরিকল্পনামন্ত্রী আব্দুস সালাম বলেন, প্রকল্প পরিচালকদের প্রশিক্ষণে জোর দিতে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। সেই সঙ্গে একজন প্রকল্প পরিচালককে যেন একাধিক প্রকল্পে নিয়োগ না দেওয়া হয় সেদিকেও নজর দিতে বলেছেন। ঢাকা অঞ্চলের আশপাশে যেখানে যেখানে জমি আছে সেগুলোতে চাষ ত্বরান্বিত করার নিদের্শনাও প্রধানমন্ত্রী দিয়েছেন বলে জানান পরিকল্পনামন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী চলতি অর্থবছরে প্রথম তিন মাসে প্রকল্পের প্রস্তুতি সম্পন্ন করার নির্দেশ দিয়েছেন বলেও জানিয়েছেন মন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, যেহেতু বৃষ্টির কারণে মাঠে প্রকল্পের কাজ করা যায় না সেজন্য কাগুজে প্রস্তুতি শেষ করতে হবে।
ব্রিফিংয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, কাজের মান নিশ্চিত করতে সবারই দায়িত্ব আছে। আগামী ৪ জুলাই সব মন্ত্রণালয়ের সচিবদের নিয়ে বৈঠক করা হবে, যাতে প্রকল্পের কাজ দ্রুত হয়। এ বিষয়গুলো লক্ষ্য রেখে কাজ করতে হবে।
আরো ১০ প্রকল্পের অনুমোদন : একনেকে পুলিশের প্রকল্প ছাড়া আরও ১০ প্রকল্পের অনুমোদন দিয়েছে। প্রকল্পগুলোর জন্য ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে প্রায় ৫ হাজার ৪৫৯ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি অর্থায়ন ৫ হাজার ২১৪ কোটি ৩৪ লাখ, বৈদেশিক অর্থায়ন ১৪০ কোটি ৪৪ লাখ এবং সংস্থার নিজস্ব অর্থায়ন ১০৫ কোটি ৯ লাখ টাকা।
প্রকল্পগুলোর মধ্যে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের ‘শিশু উন্নয়ন কেন্দ্র, কিশোরগঞ্জ, জয়পুরহাট ও চট্টগ্রাম স্থাপন’ প্রকল্পও আছে।
বন্যার শঙ্কা, প্রস্তুত থাকতে বললেন প্রধানমন্ত্রী : আবহাওয়ার যে পূর্বাভাস, তাতে আগস্টের দিকে বন্যার শঙ্কা প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এখন থেকেই মন্ত্রী–সচিবদের প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন পরিকল্পনামন্ত্রী আব্দুস সালাম। গতকাল একনেক সভায় প্রধানমন্ত্রীর এ নির্দেশনা আসে। বৈঠকের পর পরিকল্পনামন্ত্রী সাংবাদিকদের ব্্িরফ করেন।
মন্ত্রী বলেন, তিনি (প্রধানমন্ত্রী) ধারণা করছেন, আমাদের বন্যা হতে পারে। আমাদেরকে বলেছেন প্রস্তুত থাকতে। বন্যা যদি হয়েই যায়, তাহলে আমরা যেন দ্রুত ব্যবস্থা নিতে পারি। সারা দেশেই বন্যর শঙ্কা রয়েছে কিনা, সেই প্রশ্ন করা হলে পরিকল্পনা সচিব সত্যজিত কর্মকার পরে সাংবাদিকদের বলেন, প্রধানমন্ত্রী সেভাবে বলেননি, তবে আমাদের প্রস্তুত থাকতে বলেছেন, যেহেতু বন্যার শঙ্কা রয়েছে।
জুলাইয়ের দীর্ঘমেয়াদী পূর্বাভাসে কয়েকটি অঞ্চলে স্বল্প থেকে মধ্যমেয়াদী বন্যার আভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। উজানের ঢল আর ভারী বৃষ্টিতে দেশের উত্তর–পূর্বাঞ্চলের সিলেট, সুনামগঞ্জ ও নেত্রকোণা ইতোমধ্যে বন্যার কবলে পড়েছে। বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয়েছে ফেনীর নিচু এলাকা। বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে সিরাজগঞ্জেও। আগস্টের বিষয়ে আবহাওয়া অধিদপ্তর এখনও কোনো ঘোষণা না দিলেও একনেকের সভায় প্রধানমন্ত্রীর সতর্কবার্তা এল।
পাঠকের মতামত